Lost in losing part 2

 

Lost in losing
দ্বিতীয় পর্ব
এত ভালো করে ঘুমানো হয়নি বহুদিন তাই বিছানা ছাড়ার ইচ্ছে ছিলনা কিন্তু দরজায় ক্রমাগত করাঘাতে উঠতে বাধ্য হলাম। দরজায় দাড়িয়ে তিনটি সারল্যে পরিপূর্ণ মিষ্টি মুখ। জ্যোতি, শঙ্কিত এবং সৃজনা । আমার চমকে যাওয়া মুখ দেখে তারা জানালো বুদ্ধাজি তাদের বিশেষ নির্দেশ দিয়েছেন আমার যত্ন নিতে যেহেতু আমি একা।
বাইরে বেরোতেই সামনে কুয়াশা ঢাকা পাহাড় আমার সব ক্লান্তিকে তছনছ করে দিলো। কোথায় গেলো আমার নাইট ডিউটির কষ্ট, পিঠ , কোমর হাঁটু ব্যাথা, মাথা যন্ত্রণা, বমি বমি ভাব ? পাহাড়কে একটি আস্ত দাতব্য চিকিৎসালয় বলে মনে হলো যার সিলেবাসে সমস্ত ওষুধ মজুত থাকে সর্বদা।
তারপর আর কি, তিন কন্যে আমার যত্ন একটু বেশিই নিয়ে ফেলেছিল, যত্নের ঠেলায় জেরবার অবস্থা। তাদের কলকলানিতে মুখরিত হলো আমার চারপাশ। এলো যত্নে বানানো গরম চা আর স্কোয়াশের তরকারি ও রুটি সাথে কালো মরিচ ছড়ানো হাফ বয়েল ডিম।
ঝিরি ঝিরি বৃষ্টিতে ছোট বড় পাথর পেড়িয়ে তাদেরই হাত ধরে পরিচয় হলো ছোট্ট এক ঝর্নার সাথে। পরিশেষে তাদের উৎসাহে এমন একটি কাজ করলাম যা আজ অবধি ইচ্ছে থাকলেও ঠান্ডা লাগার ভয়ে করে উঠতে পারিনি , আর সেটা হলো খরস্রোতা নদীর ঠান্ডা জলে স্নান। এবং স্নানের আগে চারজনের বেসুরো গলায় চিৎকার করে গান। মনে হলো কিছু সময়ের জন্য আমার শৈশবের সাথীদের খুঁজে পেয়েছি। মহা উৎসাহে তারা আমার এত ছবি তুললো যে আগামী একটি বছর DP নিয়ে আমার আর ভাবার দরকার হবে বলে মনে হয় না। আমার বর্তমান DP টি তাদেরই উপহার।
অনেক গল্পে গানে বেলা কাটলো। দুপুরে বিভিন্ন ধরনের খাবার পরিবেশিত হলো তার মধ্যে কালি ডাল ( মিশ্রিত ডাল) আর মাছের ঝোল বিশেষ উল্লেখযোগ্য। নদী থেকে তোলা তিন ধরনের মাছ অসালা, কাটলে ( স্থানীয় ছোট কাতলা মাছ) এবং মাগুর মাছের ঝোল। এই মাগুর নামক মাছটি চেহারায় ছোট এবং হুবহু আমাদের পার্শে মাছের মত খেতে। প্রত্যেকটি রান্নাতেই নতুনত্ব থাকলেও অত্যন্ত হালকা এবং সামান্য সাতলে রান্না করা। একমাত্র মুরগি ছাড়া কোনটাতেই বেশি মশলা বা কষানো ব্যাপারটা নেই তাই সকলের এই ধরনের খাবার নাও ভালো লাগতে পারে।
আমার কঠিন নির্দেশ ছিল যে কলকাতায় পাওয়া যায় এরকম কোনোরূপ খাবার যেনো আমার চারে পাশে না থাকে তাই সন্ধেবেলা ব্যাংক থেকে ফিরে বুদ্ধজী নিজের হাতে বানালেন অয়াচিপা। এটি স্থানীয় চালের সাথে চিকেন লিভার, মাখন, রসুন, আদা, black পেপার ও ডলে লঙ্কা দিয়ে বানানো। খেতে মন্দ লাগেনি শুধু সামান্য তিতকুটে ভাবের কারণ বুদ্ধজির কাছে জানতে চাইলাম।। তিনি মহা উৎসাহে কারণটি বর্ণনা করলেন এবং শুনে আমি পেটে একটি ছোটখাটো ভূমিকম্প অনুভব করলাম। একটু বুঝিয়ে বলি... ওয়াচিপার মুল মশলা হলো আগুনে পোড়ানো মুরগীর পালকের গুঁড়ো।
এরপর এলো দেশী তন্দুরি মুরগী। সঙ্গে
সৃজনা ও সংকিত এর গাওয়া গান। এই বিশেষ সন্ধ্যাটি আমার জ্ঞানের ভাণ্ডার বাড়াতেও সাহায্য করলো। এই হোমস্টের যৌথ মালিক ও পরিচালক হচ্ছেন দুই ব্যাংকার বন্ধু।এবং স্টেট ব্যাংক অফ সিকিমে চাকুরিরত অবস্থায় তারা এই কাজটি দক্ষ্তার সাথে করে চলেছেন। 'একই সাথে দুটি প্রফেশনের অনুমতি পান কিভাবে?' জানতে চাইলে তারা বলেন সিকিম সরকার একই সাথে তিনটি প্রফেশনের ও অনুমতি দিয়ে থাকেন। এমনকি সরকারী চাকরীর পর কেউ চাইলে বিজনেস বা taxi ও চালাতে পারেন।
রাতের খাবার খাওয়ার কোনো ইচ্ছে না থাকলেও যেহেতু স্থানীয় খাবার খেতে চেয়েছি তাই আমার শাস্তি মুকুব করা হলোনা। বিকেল বেলায় একটা মোচা আমারই সামনে কাটা হয়েছিল যা আমাদের মোচারই জাত ভাই তবে মিষ্টি বেশী এবং তিতকুটে ভাবটা নেই। মোচা ও ভিন্ন স্বাদের লাউয়ের তরকারি খেয়ে নৈশাহার সম্পন্ন করলাম তবে যেটুকু না বললেই নয় সেটা হলো মোচা ও লাউয়ের তরকারিতে পেয়াঁজ রসুনের অতিমাত্রায় উপস্থিতি।
পেয়াঁজ রসুন দিয়ে মোচা খাব একথা স্বপ্নেও ভাবতে পারিনা তবে এনাদের রন্ধন প্রণালীতে কি যাদু ছিল জানিনা, ভাত একটু বেশীই খাওয়া হয়ে গিয়েছিল। বড়ো বড়ো করে কাটা পেয়াঁজ , রসুন ও কাঁচা লঙ্কা হালকা ভেজে তাতে যোগ করা হয়েছিল সেদ্ধ মোচা। সামান্য সাতলেই নুন মিষ্টি দিয়ে পরিবেশিত এই মোচার তরকারি বোঙ্গা
নামে পরিচিত। এছাড়া পেয়াঁজ রসুন দিয়ে তৈরি লাউয়ের তরকারি খেতে মোটেই খারাপ লাগেনি। বাকি রাত টুকু কেটেছিল নদীর গান শুনে, আর যেটা থাকলে ষোলোআনা পূর্ণ হতো সেটি আসতে আরো কয়েক দিন বাকি ছিল....তিনি হলেন পূর্ণিমা। তবে এক ফালি জোছনা অনেকটাই প্রত্যাশা পূরণ করতে সক্ষম হয়েছিল।
গল্প এখানেই শেষ নয় কারণ স্থানীয় খাবার গুতো তখনও আমার পিছু ছাড়েনি। সকালে রুটির সাথে গন্দ্রুকের সবজি দারুন লেগেছিল। রাই শাক সামান্য fermented করে শুকিয়ে আলু দিয়ে বানানো হয় এই গণ্ড্রুকের সবজি। সাথে ছিল গুঁড়ি আলুর ঝাল ঝাল তরকারি আর লোকাল সসেজ।
এগারোটা নাগাদ সকলকে বিদায় জানিয়ে বেড়িয়ে পড়তে বাধ্য হয়ে ছিলাম। চোখের, নাকের , হৃদয়ের সব জল একাকার করে সৃজনাদের আবার ফিরে আসার কথা দিয়ে এগোতে হয়ে ছিল। এবং শেষ চমকে আমাকে অবাক করে চারঘন্টা আগে দার্জিলিং মেল waiting লিস্ট 26 লাফ মেরে আমার যাত্রাটি নিশ্চিন্ত করেছিল।
বেড়াতে গেলে আমি সবসময় চেষ্টা করি স্থানীয় খাবার খেতে এবং এটি আমার ভ্রমণে আলাদা মাত্রা যোগ করে। সেই সঙ্গে আমি স্থানীয় মানুষদের সাথে বন্ধুত্ব পাতাবার চেষ্টাই থাকি যে বন্ধুত্ব নিখাদ এবং লম্বা টেকে, দুটো date এর পর ফিকে হয়ে যায় না । আপনাদের মানসিকতা যদি আমার সাথে সামান্যও মেলে তাহলে লসিং আপনার পরবর্তী ঠিকানা হতে পারে।
Homestay র মালিক বুদ্ধাজির পাঠানো তথ্য আপনাদের দিলাম যা সকলেই পাওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছেন।
Oongking Heem Homestay lossing rangpo khoola
Pakyong subdivision
Near Rongli bazar
Contact 9083351590
Distance from Rongli bazar
7 kilometres
Guest can go for site seen like lungchok,rolep,agamlok,
Aritar,khimseka, q khoola, phadamchen ,nimachen ,
Dzaluk,thambi view'point nathong ,baba mandir, eliphant lakh.
ড্রাইভার ভাই
দীনেশ...9749412867
NJP to NJP শুধু যাওয়া আসা ছোট গাড়ি পড়েছিল 7000 টাকা।
Tariff 2000 per person per day
সময় বিশেষে দাম পরিবর্তিত হতে পারে।
____________________________________
প্রথম পর্বে কলকাতা সম্পর্কে একটি লাইন লিখে বেশ কিছু পাঠকের অসন্তোষের মুখে পড়েছি।
"এটা সিকিম বলেই মধ্যরাতে প্রবেশ করেছি বিনা দ্বিধায়। কলকাতা হলে সম্ভব ছিলনা।"
একটু বুঝিয়ে বলি আমি এখানে শুধুমাত্র সুরক্ষার কথা বলিনি। ঘন ঘন বেড়াতে যাওয়ার কারণে বাজেট ট্রিপ করতে প্রায়ই রাতের দিকের ফ্লাইট নিয়ে রাত দুটো তিনটের সময় ও কলকাতায় বাড়িতে একা ফিরেছি। সুতরাং কলকাতার সুরক্ষা নিয়ে ভাবিনা। তুলনাটা অন্য জায়গায়।
পাহাড় শুধু পাহাড় নয়। পাহাড় মানে ওই পাহাড়ী মানুষ গুলোর সারল্যে পূর্ণ জীবনযাত্রা, অল্প সন্তুষ্ট হওয়ার মনোবৃত্তি। হিংসা, কামড়া কামড়ি , এগিয়ে থাকার প্রতিযোগিতা ছাড়াও কিভাবে মানুষগুলি দিব্যি বেঁচেবর্তে রয়েছে সেই শিক্ষা নিতে হলে আসতে হবে পাহাড়ে। বিনা চাহিদায় কিভাবে চওড়া হাসি হাসতে হয় পাহাড়ীরা জানে।
আপনি যদি পাহাড় বলতে দার্জিলিং বা গ্যাংটকের মত পার্বত্য শহরকে বেছে নেন তাহলে পাহাড় আপনি দেখেন নি। পাহাড়ের রূপ রস গন্ধ মাখতে হলে চলে যান পার্বত্য গ্রাম গুলিতে যেখানে আপনার যান্ত্রিক জীবন স্তব্ধ হতে বাধ্য। আর ঠিক যেই মুহুর্তে আপনি যন্ত্রহীন হবেন, এমন অনেক কিছু অনুভব করবেন যা আমরা বহুদিন হলো ভুলতে বসেছেন। যদি সত্যিকারের detoxification চান তাহলে কোনো পাহাড়ী গ্রামে সাতটা দিন মোবাইল সুইচ অফ করে কাটান।
আর হ্যা, রাত বারোটায় সিকিমের গ্রামের মানুষগুলির অভ্যর্থনায় যে উষ্ণতা পাবেন কলকাতায় সেটি পাওয়া দুষ্কর। নিজের কাছের বন্ধু বা আত্মীয়র বাড়িতে রাত বারোটায় হানা দিয়ে একবার ব্যাপারটা পরখ করতে পারেন। আসলে আমরা মেকি সভ্যতায় বিশ্বাসী, তাই আন্তরিকতা অনেকদিন হলো বিদায় নিয়েছে। এর পরেও যদি আপনি মেট্রো শহরের মানুষ আর পাহাড়ী মানুষ , যাদের সারল্যে কখনো মরচে ধরেনা , একই পাল্লায় মাপেন তাহলে বলবো হতে পারে আপনি বিভিন্ন দিক দিয়ে আমার থেকে অনেক বড়ো কিন্তু মানুষ চিনতে আপনার এখনও ঢের বাকি আছে ।
ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।প্রথম পর্বের লিংক
বিশেষ ধন্যবাদ Prasenjit Nandi যার পোস্ট থেকে এই জায়গাটি খুঁজে পেয়েছিলাম।
Lost in losing
দ্বিতীয় পর্ব
এত ভালো করে ঘুমানো হয়নি বহুদিন তাই বিছানা ছাড়ার ইচ্ছে ছিলনা কিন্তু দরজায় ক্রমাগত করাঘাতে উঠতে বাধ্য হলাম। দরজায় দাড়িয়ে তিনটি সারল্যে পরিপূর্ণ মিষ্টি মুখ। জ্যোতি, শঙ্কিত এবং সৃজনা । আমার চমকে যাওয়া মুখ দেখে তারা জানালো বুদ্ধাজি তাদের বিশেষ নির্দেশ দিয়েছেন আমার যত্ন নিতে যেহেতু আমি একা।
বাইরে বেরোতেই সামনে কুয়াশা ঢাকা পাহাড় আমার সব ক্লান্তিকে তছনছ করে দিলো। কোথায় গেলো আমার নাইট ডিউটির কষ্ট, পিঠ , কোমর হাঁটু ব্যাথা, মাথা যন্ত্রণা, বমি বমি ভাব ? পাহাড়কে একটি আস্ত দাতব্য চিকিৎসালয় বলে মনে হলো যার সিলেবাসে সমস্ত ওষুধ মজুত থাকে সর্বদা।
তারপর আর কি, তিন কন্যে আমার যত্ন একটু বেশিই নিয়ে ফেলেছিল, যত্নের ঠেলায় জেরবার অবস্থা। তাদের কলকলানিতে মুখরিত হলো আমার চারপাশ। এলো যত্নে বানানো গরম চা আর স্কোয়াশের তরকারি ও রুটি সাথে কালো মরিচ ছড়ানো হাফ বয়েল ডিম।
ঝিরি ঝিরি বৃষ্টিতে ছোট বড় পাথর পেড়িয়ে তাদেরই হাত ধরে পরিচয় হলো ছোট্ট এক ঝর্নার সাথে। পরিশেষে তাদের উৎসাহে এমন একটি কাজ করলাম যা আজ অবধি ইচ্ছে থাকলেও ঠান্ডা লাগার ভয়ে করে উঠতে পারিনি , আর সেটা হলো খরস্রোতা নদীর ঠান্ডা জলে স্নান। এবং স্নানের আগে চারজনের বেসুরো গলায় চিৎকার করে গান। মনে হলো কিছু সময়ের জন্য আমার শৈশবের সাথীদের খুঁজে পেয়েছি। মহা উৎসাহে তারা আমার এত ছবি তুললো যে আগামী একটি বছর DP নিয়ে আমার আর ভাবার দরকার হবে বলে মনে হয় না। আমার বর্তমান DP টি তাদেরই উপহার।
অনেক গল্পে গানে বেলা কাটলো। দুপুরে বিভিন্ন ধরনের খাবার পরিবেশিত হলো তার মধ্যে কালি ডাল ( মিশ্রিত ডাল) আর মাছের ঝোল বিশেষ উল্লেখযোগ্য। নদী থেকে তোলা তিন ধরনের মাছ অসালা, কাটলে ( স্থানীয় ছোট কাতলা মাছ) এবং মাগুর মাছের ঝোল। এই মাগুর নামক মাছটি চেহারায় ছোট এবং হুবহু আমাদের পার্শে মাছের মত খেতে। প্রত্যেকটি রান্নাতেই নতুনত্ব থাকলেও অত্যন্ত হালকা এবং সামান্য সাতলে রান্না করা। একমাত্র মুরগি ছাড়া কোনটাতেই বেশি মশলা বা কষানো ব্যাপারটা নেই তাই সকলের এই ধরনের খাবার নাও ভালো লাগতে পারে।
আমার কঠিন নির্দেশ ছিল যে কলকাতায় পাওয়া যায় এরকম কোনোরূপ খাবার যেনো আমার চারে পাশে না থাকে তাই সন্ধেবেলা ব্যাংক থেকে ফিরে বুদ্ধজী নিজের হাতে বানালেন অয়াচিপা। এটি স্থানীয় চালের সাথে চিকেন লিভার, মাখন, রসুন, আদা, black পেপার ও ডলে লঙ্কা দিয়ে বানানো। খেতে মন্দ লাগেনি শুধু সামান্য তিতকুটে ভাবের কারণ বুদ্ধজির কাছে জানতে চাইলাম।। তিনি মহা উৎসাহে কারণটি বর্ণনা করলেন এবং শুনে আমি পেটে একটি ছোটখাটো ভূমিকম্প অনুভব করলাম। একটু বুঝিয়ে বলি... ওয়াচিপার মুল মশলা হলো আগুনে পোড়ানো মুরগীর পালকের গুঁড়ো।
এরপর এলো দেশী তন্দুরি মুরগী। সঙ্গে
সৃজনা ও সংকিত এর গাওয়া গান। এই বিশেষ সন্ধ্যাটি আমার জ্ঞানের ভাণ্ডার বাড়াতেও সাহায্য করলো। এই হোমস্টের যৌথ মালিক ও পরিচালক হচ্ছেন দুই ব্যাংকার বন্ধু।এবং স্টেট ব্যাংক অফ সিকিমে চাকুরিরত অবস্থায় তারা এই কাজটি দক্ষ্তার সাথে করে চলেছেন। 'একই সাথে দুটি প্রফেশনের অনুমতি পান কিভাবে?' জানতে চাইলে তারা বলেন সিকিম সরকার একই সাথে তিনটি প্রফেশনের ও অনুমতি দিয়ে থাকেন। এমনকি সরকারী চাকরীর পর কেউ চাইলে বিজনেস বা taxi ও চালাতে পারেন।
রাতের খাবার খাওয়ার কোনো ইচ্ছে না থাকলেও যেহেতু স্থানীয় খাবার খেতে চেয়েছি তাই আমার শাস্তি মুকুব করা হলোনা। বিকেল বেলায় একটা মোচা আমারই সামনে কাটা হয়েছিল যা আমাদের মোচারই জাত ভাই তবে মিষ্টি বেশী এবং তিতকুটে ভাবটা নেই। মোচা ও ভিন্ন স্বাদের লাউয়ের তরকারি খেয়ে নৈশাহার সম্পন্ন করলাম তবে যেটুকু না বললেই নয় সেটা হলো মোচা ও লাউয়ের তরকারিতে পেয়াঁজ রসুনের অতিমাত্রায় উপস্থিতি।
পেয়াঁজ রসুন দিয়ে মোচা খাব একথা স্বপ্নেও ভাবতে পারিনা তবে এনাদের রন্ধন প্রণালীতে কি যাদু ছিল জানিনা, ভাত একটু বেশীই খাওয়া হয়ে গিয়েছিল। বড়ো বড়ো করে কাটা পেয়াঁজ , রসুন ও কাঁচা লঙ্কা হালকা ভেজে তাতে যোগ করা হয়েছিল সেদ্ধ মোচা। সামান্য সাতলেই নুন মিষ্টি দিয়ে পরিবেশিত এই মোচার তরকারি বোঙ্গা
নামে পরিচিত। এছাড়া পেয়াঁজ রসুন দিয়ে তৈরি লাউয়ের তরকারি খেতে মোটেই খারাপ লাগেনি। বাকি রাত টুকু কেটেছিল নদীর গান শুনে, আর যেটা থাকলে ষোলোআনা পূর্ণ হতো সেটি আসতে আরো কয়েক দিন বাকি ছিল....তিনি হলেন পূর্ণিমা। তবে এক ফালি জোছনা অনেকটাই প্রত্যাশা পূরণ করতে সক্ষম হয়েছিল।
গল্প এখানেই শেষ নয় কারণ স্থানীয় খাবার গুতো তখনও আমার পিছু ছাড়েনি। সকালে রুটির সাথে গন্দ্রুকের সবজি দারুন লেগেছিল। রাই শাক সামান্য fermented করে শুকিয়ে আলু দিয়ে বানানো হয় এই গণ্ড্রুকের সবজি। সাথে ছিল গুঁড়ি আলুর ঝাল ঝাল তরকারি আর লোকাল সসেজ।
এগারোটা নাগাদ সকলকে বিদায় জানিয়ে বেড়িয়ে পড়তে বাধ্য হয়ে ছিলাম। চোখের, নাকের , হৃদয়ের সব জল একাকার করে সৃজনাদের আবার ফিরে আসার কথা দিয়ে এগোতে হয়ে ছিল। এবং শেষ চমকে আমাকে অবাক করে চারঘন্টা আগে দার্জিলিং মেল waiting লিস্ট 26 লাফ মেরে আমার যাত্রাটি নিশ্চিন্ত করেছিল।
বেড়াতে গেলে আমি সবসময় চেষ্টা করি স্থানীয় খাবার খেতে এবং এটি আমার ভ্রমণে আলাদা মাত্রা যোগ করে। সেই সঙ্গে আমি স্থানীয় মানুষদের সাথে বন্ধুত্ব পাতাবার চেষ্টাই থাকি যে বন্ধুত্ব নিখাদ এবং লম্বা টেকে, দুটো date এর পর ফিকে হয়ে যায় না । আপনাদের মানসিকতা যদি আমার সাথে সামান্যও মেলে তাহলে লসিং আপনার পরবর্তী ঠিকানা হতে পারে।
Homestay র মালিক বুদ্ধাজির পাঠানো তথ্য আপনাদের দিলাম যা সকলেই পাওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছেন।
Oongking Heem Homestay lossing rangpo khoola
Pakyong subdivision
Near Rongli bazar
Contact 9083351590
Distance from Rongli bazar
7 kilometres
Guest can go for site seen like lungchok,rolep,agamlok,
Aritar,khimseka, q khoola, phadamchen ,nimachen ,
Dzaluk,thambi view'point nathong ,baba mandir, eliphant lakh.
ড্রাইভার ভাই
দীনেশ...9749412867
NJP to NJP শুধু যাওয়া আসা ছোট গাড়ি পড়েছিল 7000 টাকা।
Tariff 2000 per person per day
সময় বিশেষে দাম পরিবর্তিত হতে পারে।
____________________________________
প্রথম পর্বে কলকাতা সম্পর্কে একটি লাইন লিখে বেশ কিছু পাঠকের অসন্তোষের মুখে পড়েছি।
"এটা সিকিম বলেই মধ্যরাতে প্রবেশ করেছি বিনা দ্বিধায়। কলকাতা হলে সম্ভব ছিলনা।"
একটু বুঝিয়ে বলি আমি এখানে শুধুমাত্র সুরক্ষার কথা বলিনি। ঘন ঘন বেড়াতে যাওয়ার কারণে বাজেট ট্রিপ করতে প্রায়ই রাতের দিকের ফ্লাইট নিয়ে রাত দুটো তিনটের সময় ও কলকাতায় বাড়িতে একা ফিরেছি। সুতরাং কলকাতার সুরক্ষা নিয়ে ভাবিনা। তুলনাটা অন্য জায়গায়।
পাহাড় শুধু পাহাড় নয়। পাহাড় মানে ওই পাহাড়ী মানুষ গুলোর সারল্যে পূর্ণ জীবনযাত্রা, অল্প সন্তুষ্ট হওয়ার মনোবৃত্তি। হিংসা, কামড়া কামড়ি , এগিয়ে থাকার প্রতিযোগিতা ছাড়াও কিভাবে মানুষগুলি দিব্যি বেঁচেবর্তে রয়েছে সেই শিক্ষা নিতে হলে আসতে হবে পাহাড়ে। বিনা চাহিদায় কিভাবে চওড়া হাসি হাসতে হয় পাহাড়ীরা জানে।
আপনি যদি পাহাড় বলতে দার্জিলিং বা গ্যাংটকের মত পার্বত্য শহরকে বেছে নেন তাহলে পাহাড় আপনি দেখেন নি। পাহাড়ের রূপ রস গন্ধ মাখতে হলে চলে যান পার্বত্য গ্রাম গুলিতে যেখানে আপনার যান্ত্রিক জীবন স্তব্ধ হতে বাধ্য। আর ঠিক যেই মুহুর্তে আপনি যন্ত্রহীন হবেন, এমন অনেক কিছু অনুভব করবেন যা আমরা বহুদিন হলো ভুলতে বসেছেন। যদি সত্যিকারের detoxification চান তাহলে কোনো পাহাড়ী গ্রামে সাতটা দিন মোবাইল সুইচ অফ করে কাটান।
আর হ্যা, রাত বারোটায় সিকিমের গ্রামের মানুষগুলির অভ্যর্থনায় যে উষ্ণতা পাবেন কলকাতায় সেটি পাওয়া দুষ্কর। নিজের কাছের বন্ধু বা আত্মীয়র বাড়িতে রাত বারোটায় হানা দিয়ে একবার ব্যাপারটা পরখ করতে পারেন। আসলে আমরা মেকি সভ্যতায় বিশ্বাসী, তাই আন্তরিকতা অনেকদিন হলো বিদায় নিয়েছে। এর পরেও যদি আপনি মেট্রো শহরের মানুষ আর পাহাড়ী মানুষ , যাদের সারল্যে কখনো মরচে ধরেনা , একই পাল্লায় মাপেন তাহলে বলবো হতে পারে আপনি বিভিন্ন দিক দিয়ে আমার থেকে অনেক বড়ো কিন্তু মানুষ চিনতে আপনার এখনও ঢের বাকি আছে ।
ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।
 












Previous Post Next Post

Contact Form