The Search Of The Western Ghats Part 2

 বঙ্গনারীর পশ্চিমঘাট অন্বেষণ

দ্বিতীয় পর্ব
বাসের পেট থেকে লাগেজ সংগ্রহ করে কালকে রাতে বুক করা homestay এর দিকে পা বাড়ালাম।
নাম " Silent De Coorg".(09900001307). বুকিং এর ব্যপারে বলি, আমি আগে থেকে কিছু বুক করিনা কারণ আমার ছুটি যেকোনো সময় ক্যান্সেল হতে পারে। আমি ব্যাঙ্গালোর এয়ারপোর্ট নেমে বুকিং করেছিলাম, মৌখিক, টাকা পয়সা কিছু জমা করিনি। যেহেতু একা বেরোই, মাথা গোঁজার ঠাঁই একটা পাবই এই ব্যপারে আমি নিশ্চিন্ত। বাস স্ট্যান্ড থেকে গাড়ি পড়লো 100 টাকা, auto করলে নেবে 50 টাকা।
রুমটি বেশ ভালো, আড়ম্বরহীন কিন্তু পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। homestay তে আরো বিভিন্ন মানের রুম আছে। আমার রুমটি পড়েছিল 1200 টাকা। ফ্রেশ হয়ে কেয়ারটেকার পিটার ভাইয়ের পরামর্শ মতো একটি গাড়ি বুক করলাম লোকাল সাইট seeing এর জন্য। পড়লো 2000 টাকা। প্রথম গন্তব্য দুবারে এলিফ্যান্ট ক্যাম্প। পৌঁছে যা বুঝলাম ক্যাম্পে পৌঁছতে হলে আধকিলোমিটার রাস্তা যা কিনা পাথরের , অনেকটাই জলে নিমজ্জিত, তার উপর দিয়ে যেতে হবে । প্রত্যেককেই জুতো ছেড়ে খালি পা অথবা স্লিপার পরে যাচ্ছে। খালি পায়ে হাঁটার অভ্যেস নেই তাই আমি ওসবের তোয়াক্কা না করে স্নিকার পরেই এগোলাম এবং তার ফল পেলাম হাতে নাতে। জুতো সম্পূর্ণ ভিজে গেলো এবং আমিও পাথরের মধ্যে পড়ে গেলাম, সে এক বিশ্রী অবস্থা। সকলকে জানাই নদীর জল কমে গেলে নৌকা বন্ধ হয়ে যায় সুতরাং একপাটি হাওয়াই চটি অবশ্যই আনবেন।
ভেতরে ঢুকতেই প্রচুর হাতির দেখা মিললো। হাতিকে কে খাওয়ানো, স্নান করানো প্রত্যেকটি এক্টিভিটির মূল্য আলাদা আলাদা , এছাড়া প্রবেশ মূল্য 50 টাকা। কিছুক্ষন কাটিয়ে সেই ভয়ঙ্কর রাস্তা অতিক্রম করে আবার ফিরে আসতে হলো। আমার অস্থিগত সমস্যার জন্য ওই রাস্তা ভয়ঙ্কর মনে হলে বাকিদের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সাধারণ ।
পরের গন্তব্য নিসর্গধাম। এখানে ঢোকার ঠিক আগের মুহূর্তে একটি সরকারি দোকানে 50 শতাংশ ছাড় পাওয়ার কারণে প্রচুর ডার্ক চকলেট কিনলাম। ভেতরে নিকো পার্কের মতো একটি পার্ক, ডিয়ার পার্ক এইসব দেখে খুব একটা ভালো লাগলনা বা বলা যায় যা কলকাতায় অতি সহজেই পাওয়া যায় তা কুর্গে দেখে সময় নষ্ট করতে চাইলাম না। তাই বেরিয়ে এলাম এবং পরের গন্তব্যে মনোযোগ দিলাম।
পরবর্তী গন্তব্য নেস্টি কফি প্লান্টেশন ট্যুর। একজন গাইড এই ট্যুর টি করবার দায়িত্বে আছেন এবং তিনি বিভিন্ন রকমের কফি ও মশলার গাছের সঙ্গে আমাদের পরিচিত করবেন scientific name সমেত। দশজন ট্যুরিস্ট জমলে তবেই ট্যুরটি শুরু হবে। দেরী আছে দেখে এক স্থানীয় ভাইয়ের কোথায় যা বুঝলাম এখন কফি ব্লসম শুরু হয়ে গেলেও এইখানে এখনো ফুল ফোটেনি। পাশেই কফির দানা থেকে কফি তৈরি হছে, আমি প্লান্টেশন ট্যুর ছেড়ে সে দিকে মনোযোগ দিলাম কারণ জীবনে প্রচুর spice গার্ডেন ট্যুর করার সুবাদে ওখানে কি হতে চলেছে আমি মোটামুটি বুঝে গিয়েছিলাম। কফি তৈরির কারখানাটি বেশ ভালো এবং সেখানে বেশকিছু নতুন মশলার সাথে পরিচিত হলাম। একধরনের ছোট ছোট কাঁচা লঙ্কা দেখলাম যে কিনা প্রচুর দামে বিক্রি হচ্ছে। জানা গেল এটি প্রতিদিন একটি করে খেলে অম্বল, হার্টের অসুখ ও পেপটিক আলসার নিরাময় হয়। আমার এতদিনের কষ্টার্জিত বিদ্যার ঠিক উলট পুরান দেখে বিশেষ সময় নষ্ট না করে বেড়িয়ে আসতে গিয়ে দেখলাম প্লান্টেশন ট্যুর এখনো শুরু হয়নি। সূর্যদেব তখন মাথার ওপরে অকৃপণ করুণা বর্ষণ করছেন। এই গরমে আর থাকার ইচ্ছে হলোনা এবং সেই সঙ্গে দ্বিপ্রহরিক আহারের প্রয়োজন বোধ করলাম। একটু এগোতেই উড্ডুপি গার্ডেন, এখানকার সেরা নিরামিষ রেস্টুরেন্ট এলাম। এখানে দক্ষিণ ভারতীয় লাঞ্চের মূল্য 100 টাকা, পুরী, ভাত, সাম্বার, রসম, দুরকম তরকারি, রাইতা ও পায়েসম। খাবার অতি উপাদেয় এবং পেটচুক্তির হিসেবে চলছে।
পেটে খাবার পড়তেই চোখ দুটোও ঢুলে এলো কিন্তু তার থেকেও বড়ো ব্যপার হলো দুটি পা ব্যথায় ফুলে উঠেছে। ড্রাইভার ভাইকে homestay যে নামিয়ে ঘন্টা দুয়েক পরে আসতে বললাম। ঘরে ঢুকে পায়ে crape bandage বেঁধে 1000 mg প্যারাসিটামল খেয়ে একটু বিশ্রাম নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম raja's tomb এর উদ্যেশ্যে।
বস্তুত পক্ষে আমার আগে যাওয়ার কথা ছিল আবে ফলস ।পরে rajas seat এ বসে সূর্যাস্ত দেখবো বলে পরিকল্পনা করেছিলাম। কিন্তু ড্রাইভার ভাই জানালো আবে ফলস এ একেতো জল নেই, বেশ কিছুটা হাঁটতে ও হবে, আমার পায়ের যা অবস্থা যাওয়া ঠিক হবেনা তাই গন্তব্য পরিবর্তন করে Raja's seat যাওয়াটাই ঠিক মনে করলাম।
চারিদিকে ফুলে ফুলে ভরা এই স্থানটি আমার বড়ো ভালো লাগলো। এখান থেকে পাহাড়ের নীচে অনেক খানি সুন্দর দৃশ্যের সাক্ষী থাকা যায়। একটা বসার জায়গাও পেয়ে গেলাম সাতটা পর্যন্ত কাটিয়ে ফিরে চললাম রাতের খাবারের উদ্যেশ্যে চেনা পরিচিত উড্ডুপি গার্ডেনে। কিন্তু আমার এক facebook বন্ধুর কল্যানে ( Anuttama Poddar) পরিকল্পনা পরিবর্তন করে চললাম একটি নতুন খাবারের অনুসন্ধানে কারণ এখানকার Pork নাকি ভীষণ সুস্বাদু। রেস্টুরেন্টের নাম Amritha ( দক্ষিণ ভারতীয়রা ত কে থ উচ্চারণ করে).
এখানে রাতের আহার করে নিজেকে ধন্য মনে হলো তার আরো একটি কারণ হলো স্বল্প দামে এই মানের খাবার। আমি যা যা নিয়ে ছিলাম সেগুলি হলো চালের রুটি, সুখা মশলা pork, লেমন রাইস এবং সাথে ফ্রী ভেজ রাইতা। খাবার গুলি অতি উপাদেয় ছিল। আমি সব সময় বেড়াতে এসে স্থানীয় খাবার চেখে দেখার চেষ্টা করি এতে সস্তাও পরে আবার পকেটের স্বাস্থ্যও ভালো থাকে। আরেকটি কথা না জানালেই নয় এখানে পানীয় বেশ সস্তা, যাদের অভ্যাস আছে চেষ্টা করতেই পারেন। ফিরে এসেই নিদ্রাদেবীর শরণাপন্ন হলাম কারণ কাল ভোর পাঁচটায় জগন্নাথ ভাই জীপ নিয়ে আসবে, বেরোতে হবে আমার পরবর্তী গন্তব্য মান্দালপেটটির উদ্দেশ্যে।
কুর্গের ড্রাইভার ভাইয়ের যোগাযোগ Raymand Desuja 973135 8532

চাইলে দেখে নিতে পারেন আমার অপটু হাতের তৈরি ভিডিওটি। লিঙ্ক https://youtu.be/F8Ciza_w8PM











Previous Post Next Post

Contact Form