Duka Valley

 এক ঘুরণচণ্ডী ও দুক্কা উপতক্যার গল্প।

"Everything happens for a reason." উক্তিটি খুব সম্প্রতি আরও একবার উপলব্ধি করার সুযোগ পেলাম। একটু বুঝিয়ে বলি।
প্রতিবার বেড়িয়ে আসার পর যখনই আমার ব্যাংক একাউন্ট ঠন ঠন করে, তৎক্ষণাৎ শপথ গ্রহণ করি যে অন্তত পক্ষে দুমাস কোথাও বেড়াতে যাবনা।এবার পয়সা জমাবোই। কিন্তু কি যে হয়? ফেসবুকের পাহাড় পাগল বন্ধুদের ষড়যন্ত্রে প্রতিদিন পাহাড় আমায় ডাকে।শয়নে, স্বপনে, বিনা নিমন্ত্রণে ঢুকে যায় আমার subconscious মনে। দোষ কি শুধু আমার? সকলের story আর পোস্ট এ শুধু পাহাড়, পাহাড় আর পাহাড়। আর ভ্রমণ গ্রুপ গুলোর ও অবদান কিছুমাত্র কম না বরং উৎপীড়ন বাড়ানোয় যথেষ্ট সক্রিয় ভুমিকা গ্রহণ করে। গ্রুপ গুলির উদ্দেশ্য যথেষ্ট সাধু হলেও মানস ভ্রমণটা আমার দ্বারা স্রেফ হয়না। যতক্ষন পর্যন্ত নিজের চোখে না দেখি, শরীরের প্রতিটি শিরায় শিরায় উপলব্ধি না করতে পারি ততক্ষন পীড়িত হতেই থাকি।
গরমের ছুটিতে আমার পাহাড়ে যাওয়া মানা, কারণ ওই সময়টিতে প্রায় সব কটি পার্বত্য শহরকে ( বিশেষত north bengal আর সিকিম) অষ্টমীর একডালিয়া বলে ভ্রম হয়। কিন্তু মাথায় একবার পোকা নড়লে কিছু করার থাকেনা। অগত্যা ততকাল টিকিট এবং নর্থ সিকিম ভ্রমণ। সেই গল্প আরেকদিন হবে। আসল বিপত্তি বাঁধলো যখন ফেরার রাস্তাটি বন্ধ হয়ে গেলো। ততকাল হলোনা, ফ্লাইট fare 17,000 , বাসের টিকিট সাড়ে চার হাজার টাকা । আর ঠিক এই রকম অবস্থায় আমার গল্পটি নতুন মোড় নিলো। আগমন হলো কিছু নতুন চরিত্রের সেই সঙ্গে নতুন লোকেশন।
অনেক কষ্ট করে দিন দুয়েক পর বাসের টিকিট পাওয়া গেলো 2100 টাকার বিনিময়ে। দুদিন হাতে পেয়ে একদিকে খুশি হলাম , সেই সঙ্গে পশ্চিম ও দক্ষিণ সিকিমের দু চারটি অনাঘ্রাতা গ্রামে homestay ও পাওয়া গেলো। কিন্তু মুশকিল হলো গ্যাংটক থেকে গন্তব্যে যাওয়া ও শিলিগুড়ি ড্রপ পনেরো হাজার টাকা চাইছে।
গরমের ছুটিতে সিকিম মোটামুটি পর্যটন জ্বরে জ্বলছে। গত দুবছর অভুক্ত থাকার ফলে এ বছরে সবটা একসাথে খেয়ে নিতে চাইছে বোধহয়। বদহজমের ব্যাপারটা নিয়ে তেমন ভাবছে না। সিকিম সরকার গ্যাংটক থেকে changu ও বাবামন্দির টুরের জন্য প্রতিদিন দশটি বাস বরাদ্দ করতে বাধ্য হয়েছে কারণ চারিদিকে সিকিম পর্যটনকে বয়কট করার রব উঠেছে।
কি করবো ভাবছি এই সময়ে মুশকিল আসানে এগিয়ে এলো এক পুরোনো বন্ধু আর আমার বন্ধু ভাগ্য যে ঈর্ষণীয় তা অচিরেই প্রমাণ হলো। কারণ ওর মাধ্যমেই খোঁজ পেলাম কালিম্পং জেলার এক অনাঘ্রাত গ্রাম ... ডুক্কা valley।
গ্যাংটক থেকে সকাল সাড়ে সাতটার বাসে পৌঁছলাম কালিম্পং বাসস্টান্ড পৌঁছলাম। সেখানে অপেক্ষা করছিল কমল ছেত্রী ভাই। গাড়িতে ঘন্টা দেড়েকের রাস্তা যা চোখের পক্ষে অতীব মনোরম । একে একে আলগারা, মাইরুন ফরেস্ট পেরিয়ে পৌঁছলাম দুককা valley। এই গ্রামে একটি মাত্র থাকার জায়গা। নাম ডুককা valley homestay।
Homestay এর অবস্থানটি অকল্পনীয়। বাম দিকে পেডং , ডানে রিষপ, মাঝখানে উঁকি মারছে সিকিম। একদম পেছনে Neora valley national পার্ক।
আড়ম্বরহীন অথচ পরিচ্ছন্ন থাকার ব্যবস্থা। প্রতিদিন 1200 টাকা জন প্রতি। পৌঁছতেই গরম গরম চা বিস্কুট আর চোখের সামনে বিস্তীর্ণ পাহাড় ঘেরা এই উপত্যকা স্বর্গীয় পরিবেশের সৃষ্টি করলো। খানিকটা উপভোগ করে রুমে গেলাম। যেখানে দুটো জানালাই ছিল অসাধারণ।
পরিষ্কার হয়ে ডাইনিং এর দিকে পা বাড়ালাম।গরম ভাত, ডাল, আলুভাজা, ঢেঁড়সের তরকারি , ডিমের ঝোল। হালকা অথচ অসাধারণ রান্না।পুরো দুপুরটা কেটে গেলো উপত্যকাটির রসাস্বাদন করতে। Homestay এর caretaker সিলভাস্টার ভাইয়ের সাথে গ্রামটি ঘুরতে বেরোলাম।গ্রামটির মুল প্রাণকেন্দ্র হলো একটি ছোট চার্চ যেখান থেকে চাইলে অসাধারণ সূর্যাস্তের সাক্ষী থাকা যায়। গ্রামটিতে মূলত খ্রীষ্ট ধর্মাবলম্বীদের বাস। এরা সরল সাধারণ লেপচা। পৃথিবী থেকে অনেকাংশে বিচ্ছিন্ন।
গ্রাম ঘুরতে এসে একরাশ মন খারাপ ঘিরে ধরে। মাত্র কয়েকদিন আগে এখানে শিক্ষার আলো পৌঁছেছে কিন্তু সেই অর্থে নয়। সরকারী যোজোনায় স্কুল তৈরি হলেও অতি দরিদ্র ছাত্র ছাত্রীদের কাছে লেখার পেন্সিল বা খাতা কেনা বিলাসিতার সমতুল্য। নেই কোনো সচেতনতা। প্রায় পরিবারে চার থেকে সাতটি সন্তান, অপুষ্টির শিকার গর্ভবতী মা, নেই কোনো স্বাস্থ্যব্যবস্থা, বিনা চিকিৎসায় রোগীর জটিলতা বৃদ্ধি, আরও কত কি। এরপরেও ওরা নির্মল হেসে আমাকে স্বাগত জানায় কারণ কোনো মলিনতাই ওদের স্পর্শ করতে পারেনা। শুধু স্বপ্ন দেখে কোনো একদিন গ্রামটার উন্নতি হবেই।ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা নামে। দুরে পাহাড়ের আলো গুলি জ্বলে ওঠে। অবাক আমি তাকিয়ে থাকি অসীম মুগ্ধতায়।
এই দুঃ সময়ে আমার তৎকালের টিকিট, হোটেল, টুর প্যাকেজ সব করে দিয়েছিল পিংকি ঘোষ
যোগাযোগ 8910953917
ভালো থাকুন। ভালো রাখুন।
ক্রমশ
Previous Post Next Post

Contact Form