বঙ্গনারীর পশ্চিমঘাট অন্বেষণ
চতুর্থ পর্ব
চললাম কুর্গ থেকে 113 km দূরত্বে শ্রীরঙ্গাপাতনা।
গন্তব্য শ্রীরঙ্গস্বামীর মন্দির দর্শন। শহরে ঢুকতেই পরিবেশ পাল্টে গেল। চারিদিক অপেক্ষাকৃত সবুজ। কর্ণাটক ভ্রমণ কালে মাইশুরুর নিকটবর্তী এই ঐতিহাসিক শহরটিকে অনায়াসে ভ্রমনসূচীতে স্থান দেওয়া যেতে পারে যার ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব অপরিসীম। এই শহরের মুল আকর্ষণ শ্রী রঙ্গস্বামীর মন্দিরটি যা অষ্টম শতাব্দীতে গঙ্গা রাজাদের দ্বারা নির্মিত। এখানে পূজিত হন রঙ্গনাথ বা স্বয়ং বিষ্ণু। মন্দিরটির নির্মাণ শৈলী অত্যন্ত আকর্ষণীয়।
এই মন্দিরটি সম্পর্কে দুটি কথা জানা প্রয়োজন
এক ,দুপুর দেড়টা থেকে চারটে সর্বসাধারণের জন্য মন্দিরের দরজা বন্ধ থাকে।
দুই মন্দিরের পাশের দোকানগুলোতে কিছু কেনার প্রয়োজন পড়লে দর কষাকষি অবশ্য প্রয়োজন । মুলদামের এক চতুর্থাংশে সব পাওয়া যায়।
এখানে একটি bird sanctuary ও আছে যেটা দেখার ইচ্ছে ছিল কিন্তু পায়ের ব্যথা এবং সূর্যদেবের অকরুন কৃপাবর্ষণে নিজেকে বিরত রাখা উচিত মনে করলাম।
পরবর্তী গন্তব্য মাইসর প্যালেস। এর আগে এই স্থানটির বর্ণনা বহু মানুষ বহু ভাবে দিয়েছেন তাই বিস্তারিত না গিয়ে ছবি দিলাম কারণ এই ক্ষেত্রে আমার শব্দভাণ্ডার কম পড়বে। এখানে ঢোকার পথে শাড়ির দোকান ( বিশেষত mysore সিল্ক) দেখে লোভ সম্বরণ করা বেশ কঠিন। দেখবনা দেখবনা করেও একবার তাকাতেই কুপোকাত
হয়েছিলাম তারপর বাকিটা ইতিহাস।
এখানে জুতো রাখার নিয়মটিও বেশ সুষ্ঠ। দোল উপলক্ষ্যে এখানে এবং বৃন্দাবন গার্ডেনে আজ সন্ধ্যেবেলা যে আলোকসজ্জার আয়োজনটি হয়েছিল তার সাক্ষী থাকার ইচ্ছে থাকলেও বন্দিপুর ও মুদুমালাই অরণ্যে সান্ধ্য ভ্রমণের পরিকল্পনা থাকায় এই ইচ্ছে থেকে বিরত থাকতে হলো।
মাইসোর পর্ব সম্পন্ন করে এগিয়ে গেলাম বন্দিপুর জাতীয় অরণ্যের দিকে। এখানে সরকারী আবাস টি পুর্ণ ছিল, অরণ্যের আসে পাশে বেশ কয়েকটি থাকার হোটেল ও রিসোর্ট থাকলেও বাজেটের বাইরে তাই অরণ্যের ভেতরে ঢুকে পড়লাম। এখানে গাড়ি থেকে নামা, বা গাড়ি থামানো একেই বারেই বারণ, এছাড়া জঙ্গলে আর যা যা নিয়ম থাকে সেগুলিকে মানা অবশ্য কর্তব্য। সময়ের হিসেবটা এমন ভাবে করেছিলাম যাতে ঠিক সন্ধ্যের আগে আগে জঙ্গলে ঢুকতে পারি। বিভিন্ন প্রজাতীর হরিণের পাল, প্রচুর ময়ূর, হনুমান ও বিভিন্ন পাখি চোখে পড়লো। মনে হচ্ছিল এই পথ শেষ না হওয়াই ভালো। জঙ্গলের exit গেটে সামান্য কিছু জিজ্ঞাসাবাদের পর ঢুকে পড়লাম মুদুমালাইয়ের জঙ্গলে। একই অরণ্য, আলাদা রাজ্য তাই আলাদা নাম। কর্ণাটক শেষ, তামিলনাড়ু শুরু। যাহা বন্দিপুর তাহাই মুদুমালাই।
মুদুমালাই ঢুকতে ঢুকতে অন্ধকার ঘনিয়ে এলো। এতে জঙ্গলের সৌন্দর্য বেড়ে গেল অনেকগুন। চারিদিকে অজস্ত্র পাখির ডাক। অন্ধকার চিড়ে এগিয়ে চলেছি। আগে থেকে পরিকল্পনা থাকলে মুদুমালাইতেও রাত্রিবাসের যথেষ্ট ব্যবস্থা ছিল কিন্তু আমি মাসনগুড়ির একটি রিসোর্টে কথা বলে রেখেছিলাম তাই এগিয়ে গেলাম। এই অরণ্য দুটির ভ্রমণ কালে কয়েকটি কথা মনে রাখা প্রয়োজন।
দুটি জঙ্গলের সাফারী করা যায়। যদি শুধু এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্য যাতায়াতের জন্য এই রাস্তা ব্যবহার করেন তবে বলি পশুদের নিরাপত্তার কারণে প্রতিদিন এই জঙ্গল মধ্যবর্তী রাস্তাটি রাত নয়টা থেকে সকল ছটা পর্যন্ত বন্ধ থাকে। একেবারে সকাল অথবা সন্ধে নামার আগের মুহূর্তে এখানে পশু ও প্রাণীর আধিক্য লক্ষ করা যায়।
মাসনগুড়ির দিকে অল্প এগোতেই একটি জটলা চোখে পড়লো। ড্রাইভার ভাই খোঁজ নিয়ে এলেন মাসনগুড়ি যাওয়ার রাস্তাটি বিশেষ কারণে বন্ধ।
নিকটস্থ শহর উটি। সুতরাং আমরা উটি যাওয়া স্থির করলাম। ততোক্ষনে চরম খিদে পেয়েছে। রাস্তায় পিয়াঁজী ও কফি খেলাম। এখানে মিনিমাম জলের বোতল পাঁচ লিটার, মুল্য আশি টাকা। সেই একটা বগল দাবা করে, লম্বা পাইনের জঙ্গল চিড়ে চললাম উটির পথে। রাস্তায় নেটের অপ্রতুলতায় কোনো হোটেল বুক করা হয়নি। শহরে ঢুকতেই গুগল দাদুর শরণাপন্ন হলাম এবং খুব শিগগিরই বাস স্ট্যান্ডের কাছে, বাজারের ওপরে মানেক ( 09442348741) হোটেলের সাথে কথা পাকা করলাম, মুল্য আটশো টাকা ও ট্যাক্স। এই হোটেলটির সুবিধা অনেক। একেতো বাজার ও বাস স্ট্যান্ডের ওপরে তারপর এর ঠিক উল্টো দিকেই রয়েছে একটি জনপ্রিয় রেস্টুরেন্ট যেখানে মাত্র একশো টাকার বিনিময়ে আটপদ সাজানো দক্ষিণ ও উত্তর ভারতীয় থালি দুই ই পাওয়ায় যায়। এছাড়া পার্কিং ও ড্রাইভারের ফ্রী থাকার জায়গা রয়েছে।
আগের পর্বের লিঙ্ক